মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আলোচনার রাতেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আইন মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে ধনঞ্জয় ফাঁসি মামলার পুনর্বিচার চেয়ে ডেপুটেশন জমা দিল “ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চ” ।
কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে এই অরাজনৈতিক সংগঠনের প্রায় তিরিশ জন সদস্য এসে আইন মন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে ডেপুটেশন দিয়ে ভারতবর্ষের বহু চর্চিত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির কেসটি রিওপেন করার জন্য আবেদন জানালেন । চন্দ্রচূড় বাবুর বক্তব্য, ‘ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের যখন ফাঁসি হয় তখন আমি ছোট ছিলাম । কিন্তু আমার আজও মনে আছে দূরদর্শনে একদিকে যখন ধনঞ্জয় বাবুর মা বাবা, স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের বুক ফাটা হাহাকার দেখানো হচ্ছিল তখন অন্যদিকে ফাঁসির দড়িতে তেল মাখানো এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন করা হচ্ছিল । সেই সময় ছাতনা নাগরিক কমিটির সদস্যরা বাঁকুড়া জেলা সহ প্রায় সারা বাংলা জুড়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে ছিলেন কিন্ত সম্ভবত আসল অপরাধীকে আড়াল করতে রাষ্ট্র শক্তি একজন হতদরিদ্র পুরোহিত ঘরের সন্তান ধনঞ্জয়কে চোদ্দ বছর জেল খাটার পরও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় । আমরা জানি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা যায়না কিন্তু মানুষের বিশ্বাস এই মামলার পুনর্বিচার হলে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুর এত বছর পরেও উনি এবং ওনার পরিবার ধর্ষক পরিচয় থেকে মুক্তি পাবেন ।তিনি আরও জানান , ‘এতে একদিকে যেমন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আত্মা শান্তি পাবে সেই রকম আসল অপরাধী চিহ্নিত হলে হেঁতাল দেবীর অতৃপ্ত আত্মাও শান্তি পাবেন ।’
তাঁর কথায় , ধনঞ্জয় মামলা আসলে বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে কারণ এই কেসে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে । কারো অনুপস্থিতিতে তার বাড়ি থেকে কিছু জিনিস যেমন ঘড়ি, বোতাম এবং গলার চেইন ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়ে কখনোই কাউকে ফাঁসির মত চরমতম শস্তি দেওয়া উচিৎ নয় । যে অভিযুক্ত সে ফেরার হওয়ার পরও বাড়িতে চুরি করা জিনিসগুলো রেখে দিল কখন পুলিশ এসে উদ্ধার করবে এটা হাস্যকর । যারা ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছিল তাদের অধিকাংশই পরে স্বীকার করেছে পুলিশ ভয় দেখিয়ে নিজেদের মত করে বয়ান লিখে সই করিয়ে নিয়েছে । কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যারা হতে পারতেন তাদের আদালতে বয়ান দিতে ডাকাই হয়নি । সেলুলজিকাল টেস্টের অধিকাংশ রিপোর্টই অসমাপ্ত এবং সেখানে লেখা আছে “নো কমেন্টস”। ফরেনসিক ল্যাবে পাওয়া গলার চেইন এক জায়গায় লেখা আঠেরো ইঞ্চি আরেক জায়গায় লেখা বাইশ ইঞ্চি । পুলিশের কুকুরকে যে রক্তমাখা রুমাল এবং কাগজ শোকানো হয়ে ছিল সেগুলি পরে ভিজে অবস্থায় পাওয়া যায় । এই বিষয়ে তদন্তের উপর ভিত্তি করে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ধনঞ্জয় নামে যে সিনেমা হয়েছে সেটি দেখলে পরিস্কার বোঝা যায় এটি অনার কিলিং এর কেস হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক । আসলে সোনার দোকানের মালিক পারেখ পরিবারের আর্থিক প্রতিপত্তির কাছে তৎকালিক প্রশাসন বিক্রি হয়ে যায় এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে । ফলে আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই ধনঞ্জয়কে খুন করেছিল রাষ্ট্রশক্তি । তাই মানুষের বিশ্বাস একশ শতাংশ সঠিক, বিচারের বাণী আজও নীরবে নিভৃতে কাঁদে । আইন মন্ত্রী মলয় ঘটকের সাথে সাক্ষাতের পর ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চের সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথেও সাক্ষাৎ করতে যান । কিন্তু জুনিয়র ডাক্তারদের সাথে মিটিং চলায় সেটি সম্ভব হয়নি । মঞ্চের সদস্যরা এবং ধনঞ্জয়ের পরিবারের বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশ্চই খুব তাড়াতাড়ি তাদের সাথে দেখা করবেন এবং সি.আই.ডি. বা সি.বি.আই. দ্বারা কেস রিওপেন করার ব্যবস্থা করে দেবেন ।
আজ ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চের পক্ষ থেকে কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামী ছাড়াও কো কনভেনর জীবন চক্রবর্তী, বাঁকুড়া জেলার কনভেনর অশোক বিদ, অনুপ ঘোষাল, মৃত্যুঞ্জয় বাগদি, কৌশিক সামন্ত, দেবশ্রী কাঞ্জিলাল , ইনামুল হক , গোবর্ধন বাগদি, শম্ভু কয়াল, অনামিকা মন্ডল সহ একাধিক নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন ।